বুকের দুধ শিশুর অধিকার। জন্মের পর একজন শিশুর যা খাবার দরকার তার সবই মায়ের দুধে আছে। বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য যা মা ও পরিবারের সবার জানা দরকার।
শিশুর প্রথম খাবার কি হবে
শিশুর প্রথম এবং একমাত্র খাবার হবে মায়ের বুকের দুধ, একজন মা যখন গর্ভধারণ করেন তখন দিনে দিনে গর্ভের শিশু বড় হবার সাথে মা যাতে শিশুকে জন্মের পর শিশুকে দুধ দিতে পারেন সেভাবে স্তনে পরিবর্তন হয়। জন্মের পর শিশুকে মায়ের শাল দুধ খেতে দিতে হবে। শিশুর জন্য প্রথমে প্রয়োজন এই শাল দুধ। শাল দুধে থাকে নবজাত শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরণের ভিটামিন ও অন্যান্য উপাদান। এই দুধ একটু হাল্কা কসের মত বের হয়, আর প্রথম দু’তিন দিন শিশুর জন্য এইটাই যথেষ্টো। এখনও অনেকে জন্মের পর শিশুকে মধু, মিস্রির পানি, চিনির পানি দিয়ে থাকেন, যা একেবারেই উচিত নয়।
শিশু কতদিন বুকের দুধ খাবে
শিশু ছয় মাস বয়স পর্যন্ত ও দু’বছর পর্যন্ত বুকের দুধের পাশাপাশি পরিবারের অন্যান্য খাবার খাবে। শিশু ছয় মাস পর্যন্ত বুকের দুধই যথেষ্ট। এই সময় অন্য কোন খাবার এমনকি পানিরও প্রয়োজন হয় না। বুকের দুধ পরিবতনশীল, মানে সময়ের সাথে শিশুর প্রয়োজন ও বয়স অনুযায়ী দুধের পরিবর্তন হয়। মানে একদিন বয়সের শিশুর প্রয়োজন আর এক বছরের শিশুর প্রয়োজন আলাদা এবং আল্লাহ মায়ের দুধে এই প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন রকম দুধ প্রস্তুত করে দেন। শিশুর ছয় মাস পর শুধু বুকের দুধ খেয়ে শিশুর বৃদ্ধি সম্ভব না, এজন্য এই সময় অন্যান্য খাবার দিতে হবে।
দুধ খাবার পর শিশু কান্নাকাটি করলে
অনেকে মনে করেন দুধ খাবার পর শিশু কাদলে সে যথেস্টো দুধ পাচ্ছে না, তা কিন্তু নয়। শিশুও তো একটা মানুষ, তার শীত-গরম, ভালো লাগা, খারাপ লাগা বিভিন্ন অনুভূতি আছে। শিশুর প্রথম কান্নার কারণ হল মাকে কাছে পাওয়ার, মা কাছে থাকলে সে নিশ্চিন্ত অনুভব করে। তাছাড়া তার গরম-ঠান্ডা লাগলে, কাপড় ভিজে গেলে, পায়খানা-প্রস্রাব করলে, দুধ খেতে খেতে পেটে বাতাস জমে গেলে ইত্যাদি নানা কারণে কাঁদতে পারে। একজন অভিজ্ঞ মা সহজেই বুঝতে পারেন কেন শিশু কাঁদছে। শিশুর পেটে যাতে বাতাস জমতে না পারে সেজন্য প্রতিবার দুধ দেবার পর ঘাড়ের উপর নিয়ে শিশুর পিঠে হাল্কা করে থাপ্পড় দিতে হবে, বাতাস বের হয়ে গেলে শিশু আর কান্নাকাটি করবে না।
শিশুর দুধ পাচ্ছে কিনা বুঝার উপায়
একটা বাচ্চা শুধু মাত্র দুধ খেয়ে সারাদিন হেসে খেলে থাকে, তার ওজন যদি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং সে যদি দিনে রাতে ২৪ ঘন্টায় অন্তত: ৪ বার প্রস্রাব করে তাহলে বুঝতে হবে সে যথেষ্ট পরিমাণ দুধ পাচ্ছে। অনেক মাই খেয়াল করবেন বাচ্চা আরও বেশি বার প্রস্রাব করে থাকে। সে যদি শুধুমাত্র বুকের দুধ খেয়ে অন্তত:৬-৮ বার প্রস্রাব করে তাহলে মায়ের আর ঠিক মত দুধ পাচ্ছে কিনা এব্যাপারে চিন্তার কিছু নেই।
সঠিবভাবে দুধ খাওয়ানোর উপায়
জন্মের পর পর শিশুকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব
বুকের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে সাহায্য করতে হবে। এজন নিকট আত্মীয় বা একজন নার্স এব্যাপারে সাহায্য করতে পারে। নবজাতক ও মাকে একই বিছানায় একই সাথে থাকতে হবে। মা কোলে নিয়ে বা বসে শিশুকে খাওয়াতে পারেন, কোলে নেবার সময় শিশুর পেটের সাথে পেট ও স্তনের বোটার চারপাশের কাল অংশ যতদুর সম্ভব শিশুর মুখের ভিতর দিয়ে খাওয়াতে হবে। মাকে পর্যাপ্ত দুধ আসার জন্য অন্য সময়ের চেয়ে একটু বেশি খেতে দিতে হবে। শিশুর সঠিক ভাবে বেড়ে উঠার জন্য যা কিছু প্রয়োজন তার সব কিছুই মায়ের দুধে আছে। বুকের দুধ খেলে শিশুর বৃদ্ধি বাড়ে, সুস্থ থাকে, সহজে রোগাক্রান্ত হয় না। যেসব শিশু মায়ের দুধ খায় তাদের ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও অন্যান্য সংক্রামক রোগ কম হয়। তাদের মধ্যে মেধাও বেশি থাকে যেসব শিশু বুকের দুধ খায়নি তাদের চেয়ে। তাই আসুন আমরা সবাই শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে সাহায্য করি।
nডা:আইরিন পারভীন আলম
প্রসূতী ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ
সহকারি অধ্যাপক (গাইনী)
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা